নিভৃতচারী আল্লাহওয়ালাদের খোঁজে ২

নিভৃতচারী আল্লাহওয়লাদের খোঁজে

নিভৃতচারী আল্লাহওয়ালাদের খোঁজে ২

হজরত বললেন, মাওলানা ইলিয়াস রহঃ তাসাউফের সারমর্ম বারো উসুল তাবলীগে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন এই উদ্দেশ্যে, যেন সহজে ছয় সিফাত হাসিল হয়ে যায়। কিন্তু আমরা এই বারো উসুলের হাকীকত বুঝতে ব্যর্থ হয়েছি। নিজেরা ইচ্ছেমতো তাতে পরিবর্তন এনেছি।  ফলে যা হবার তাই হতে লাগলো। তরবিয়ত বন্ধ হতে শুরু হলো।

মানুষ বাড়া, বড় বড় ইজতিমা হওয়া এগুলোকে আমরা তরক্কীর আলামত বুঝি। বাস্তবে বেলা যত বাড়ে, সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় তত নিকটে আসে। সূর্য পূবাকাশ থেকে মধ্য আকাশে আসা পর্যন্ত আমরা বলি, সূর্য উঠছে। আসলে কি উঠছে?  বরং ক্রমাগত তা ডুবার দিকে আগাচ্ছে। যেদিন আল্লাহর রাসুলের ইন্তিকাল হলো, সেদিন থেকেই ইসলামের সূর্য ডুবার দিকে এগুচ্ছে।

তো, বারো উসুল ছিলো তরবিয়তের জন্য। আমরা আজ সেগুলির আলোচনা করি, কিন্তু উদ্দেশ্য বুঝি না। ফলে আমলের চর্চা হয় না, উপকারও হয় না।

দাওয়াত, তালীম, ইবাদত, খিদমত -এ চার কাজে ব্যস্ত থেকে জিন্দেগির তরতীব বানানো উচিত ছিলো। খিদমতের মধ্যে কামাই -রোজগার, বিবি-বাচ্চার খিদমত সব দাখিল। তবে তা চার নম্বরে। দাওয়াত, তালীম, ইবাদত এর পরে খিদমত।যেমন হাদীসে এসেছে,

طلب كسب الحلال فريضة بعد الفريضة.

হালাল রুজি তলব করা ফরজের পরে ফরজ।

প্রথম ফরজগুলো কি?  ঐ তিন জিনিস- দাওয়াত, তালীম, ইবাদত। দাওয়াত- তালীম- ইবাদতের তাকাজাকে প্রাধান্য দেয়া, যেমন সাহাবারা করতেন।

এরপর কম খাওয়া, কম ঘুমানো, কম কথা বলা, জরুরতে কম সময় দেয়া তো তাসাউফের বুনিয়াদী উসুল। আজ আমরা সেগুলি পরিবর্তন করে নিয়েছি। আমরা ভেবেছি, কম খাওয়ার কথা বললে মানুষ আসবে না। তাই পরিবর্তন করে বলছি, খাওয়ার মধ্যে কম সময় লাগানো। নতুনরা তো এসবের হাকীকত একদম বুঝছে না,  ফলে সাথীরা সময় লাগিয়ে আসে, বাহ্যিক কিছু পরিবর্তন ছাড়া ভেতরগত ইসলাহ আগের মতো হচ্ছে না। আলিমগন সাল লাগিয়ে আসে, আগের মতো  পরিবর্তন নেই। আমরা তো তবলীগে প্রথম তিনদিন লাগানো থেকেই জিন্দেগির তরতীব করে নিয়েছি। ডাক্তারগন যখন আমাকে কম খাওয়ার কথা বলে, বলি, ভাই!  আমরা তো সে কবে থেকেই তা তরতীব বানিয়ে রেখেছি। আগে মুজাকারা হতো, পেটকে তিনভাগ করা, একভাগ খাবার, একভাগ পানি, একভাগ যিকর। আজকাল সে আলোচনা শুনা যায় না।

হজরত আরও বললেন, “

শেষবার যখন পুরোনোদের জোড়ে গেলাম, বৃষ্টির কারণে দ্বিতীয় দিন দোয়া হয়ে গেলো। ভাবলাম, আর আসতে পারি না পারি, মাঠটা একটু ঘুরে যাই। আরেক সাথীসহ ছাতা নিয়ে ঘুরলাম। দেখে ব্যথিত হলাম। খাবারের বিলাসী আয়োজন। বৃষ্টির মাঝে বিরাণী, গোশত, ইলিশ পাক হচ্ছে, আর বাকী সাথীরা একটা জায়গায় কোন মতে বিছানাগুলো জমা করে খাবারের অপেক্ষায় বসে আছে। মাঠের সর্বত্র একই চিত্র। আফসোস করলাম। মাত্র কয়েকটা দিন সাদাসিধে খেয়ে কি কাটানো যায় না? যেন সবাই আয়েসি খাওয়া-দাওয়ার উদ্দেশ্যে এখানে জমা হয়েছে।

হুজুর আরও বললেন,

চারিয়া ইজতিমা মাঠে খুব দোয়া করেছি। হে আল্লাহ!  মক্কা-মদীনায় যাওয়া মার্কেটিং-এ পরিণত হয়েছে, মাদ্রাসার সভাগুলোও বাজারে পরিণত হয়েছে,  তাবলীগের ইজতিমাগুলোও কি তবে মেলা হয়ে যাবে? হে মাওলা! তুমি তা করো না!

কী আশ্চর্য! মানুষ হাটহাজারী মাদ্রাসার সভা থেকে এক কেজি বরই নিয়ে এসে বলে, সভার বরকত নিয়ে এলাম। ইজতিমার মাঠ থেকে কম্বল নিয়ে ফিরে। কি নিয়ে ফেরার কথা ছিলো, তার বদলে কী!”